তুলসীপত্র শিবলিঙ্গে প্রদানের ব্যাপারে কড়া বিিধনিষেধ জারি করে হিন্দু পরম্পরা।পুরান অনুসারে তুলসীদেবী ছিলেন মহাপরাক্রমশালী অসুর জলান্ধের(শঙ্খাচূড়)স্ত্রী। দেববরে অজেয় হয়ে জলান্ধর বিরাট প্রতিপত্তি লাভ করেন।এমতাব্স্থায় শিব, বিষ্ণু ছলনায় আশ্রয় নিয়ে জলান্ধরকে হত্যা করেন।ক্ষুব্ধ তুলসীকে সন্তুষ্ট করতে বিষ্ণু তাকে বর দেন।তিনি বিষ্ণু পদে স্হায়ী আসন লাভ করেন।কিন্তু,শিবকে ক্ষমা করেননি তুলসী,তিনি শিবকে অভিশাপ দেন।সেই থেকে শিব পূজায় তুলসী দেওয়া নিষিদ্ধ হয়।আরেকটি মতবাদ,পুরানের কথা অনুসারে,একদিন তরুন গনপতি গনেশকে তুলসী ধ্যানস্থ দেখে,তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে,তার প্রেমে পড়েন তুলসী দেবী।কিন্তু গনেশ জানান তিনি কঠিন প্রতিজ্ঞা বদ্ধ,তিনি ব্রক্ষ্মচারী।প্রেম বা বিবাহ তার পক্ষে অসম্ভব।তিনি গনেশকে অভিশাপ দেন ব্রক্ষচর্য পালন করা তার পক্ষে স্হায়ী হবেনা।গনেশও তাকে অভিশাপ দেন যে,তিনি পশুর স্ত্রী রূপে পরিনত হবেন।পরে তুলসী গনেশের কাছে ক্ষমা চাইলে,গনেশ তাকে জানান,তুলসী দেবত্বপ্রাপ্ত হবেন।কিন্তু,তার পূজায় তুলসী ব্যবহৃত হবেনা।গৃহের অভ্যন্তরে তুলসীবৃক্ষ স্হাপন নিষিদ্ধ হয়।আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে তুলসী দেবীর স্বামীর মৃত্যুর পর বিষ্ণু,তুলসীকে বর দান করেন।বর অনুসারে তুলসী বিষ্ণুকে জানান তাকে গৃহে নিয়ে যাওয়ার জন্য,কিন্তু,বিষ্ণু জানান তার গৃহে লক্ষ্মী রয়েছে সেখানে তুলসী থাকতে পারেনা।ফলে তুলসীর স্হান গৃহে না হয়ে হয় গৃহাঙ্গনে।
অজানাকে জানা
শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
তুলসীদেবীকে শিব ও গনেশের অভিশাপ
শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
তুলসীদেবীর জম্মবৃত্তান্ত
যস্যা দেবাস্ত্ত লীনাস্ত্ত বিশ্বেষু অখিলেষুচ,তুলসীতেন বিখ্যাত।
সরলার্থ:এ অখিল জগতে যে দেবীর তুলনা নেই,তিনিই তুলসী নামে বিখ্যাত হয়েছেন।
তুলসীনামে গোলকে শ্রীকৃষ্ণপ্রিয়া শ্রীরাধিকার এক সহচরী ছিলেন।শ্রীরাধিকা তাকে মানবযোনি লাভের অভিশাপ দেন।,তখন তুলসী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরনাপন্ন হন।শ্রীকৃষ্ণ তুলসীকে বললেন যে,তুলসী মানবযোনিতে জন্মগৃহন করলে,তপস্যাবলে নারায়নের অংশ লাভ করবেন।অভিশাপ অনুসারে তুলসী জগতে ধর্মরাজ নামে রাজার এবং তার স্ত্রী মাধবীদেবীর কন্যারূপে জন্মগৃহন করেন।তুলসী অতুলনীয় রূপ লাবন্যের অধিকারী হন।পরে তুলসী বনে গিয়ে ব্রক্ষ্মার তপস্যা নিমগ্ন হন,ব্রক্ষ্মাদেব তার সাধনায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বর চাইতে বলেন।তুলসী নারায়নকে পত্নীরূপে পাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন।ব্রক্ষ্মা বললেন যে,তুলসী দানবরূপী শঙ্খচূড়কে বিবাহ করলে নারায়ন প্রাপ্তি সম্ভব হবে।নারায়নের আর্শিবাদে তুলসীবৃক্ষ রূপে জন্ম নিবে,বিশ্বপাবকে পূজা পাবে।তুলসী ব্যতিত নারায়ন পূজা বিফল হবে।
তুলসী কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ধরাধামে জন্মগৃহন করেন।
মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
শ্যাম বাউল গোস্বামী
শ্রী শ্রী শ্যাম বাউল গোস্বামী(সপ্তদশ শতাব্দী) ছিলেন ইষ্ট সাধনায় সিদ্বি লাভে সমর্থ,অলোকিক শক্তি লাভের অধিকারী,যুগসিদ্ধ এক মহাপুরুষ।শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গেসাইর নিকট তিনি দীক্ষা লাভ করেন,এবং বৈষনব ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি বানিয়াচং আসেন।অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে অবশেষে তিনি যাত্রাপাশা মহল্লায় আখড়া স্হাপন করেন।তিনি অসহায় জীবের পরিত্রানকারী হিসেবে,মানুষের অন্তরে স্হান করে নিয়েছিলেন।শ্যাম বাউলের বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ও ভারতে অনেক ভক্ত ও শিষ্য রয়েছে।প্রতি বছর আখড়ার সন্নিকটে তার স্মারনে চৈত্রমাসের অষ্টমীর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।তার জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।শ্যাম বাউলের আখড়া শ্যামবাউল নামে এক সাধক কর্তৃক এই আখড়া প্রতিষ্ঠিত হয়।বানিয়াচঙ্গের সর্বদক্ষিনে যাত্রাপাশার দক্ষিন প্রান্তে এ আখড়াটি অবস্থিত।শ্যাম বাউল জগন্মোহনীবাউল বৈষনব ধর্মানুসারী ছিলেন।লাখাই উপজেলার বাঘাসুরা নিবাসী,জগম্মোহন গোসাই প্রায় তিনশত বছর পূর্বে এ ধর্মমতের প্রবর্তন করেন।এ ধর্মমতে গুরুকে প্রত্যক্ষ ভগবান জ্ঞানক্রমে গুরুকে উপাস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এরা কোন মূর্তিপূজা করেনা তত্বগতদিকে পুরুষদের ব্রক্ষ্মচর্য অবশ্যই পালনীয়।স্হানীয়ভাবে এ সম্প্রদায়ের লোকদের বৈরাগী বলে আখ্যায়িত করা হয়।কৈর্বত সমাজে এ ধর্মমতের প্রচলন সর্বাধিক।বারুনী উপলক্ষে হিন্দু,মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বহুলোক সমাগম হয়।অনেকের বিশ্বাস শ্যাম বাউলের আখড়ায় বারুনী উপলক্ষে অপরাহ্নে অনেক ঝড়,তুফান হয়ে থাকে।
বিঃদ্রঃ বিস্তারিত আখড়া দর্শনে
মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোসাই
শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোসাইদাস বংশীয় বনমালীর ওরশে ও জাহ্নবীর গর্ভে ১৫৭৬ সালে জন্ম গৃহন করেন।তিনি অগাধ জ্ঞান ও আধ্যাতিক শক্তির অধিকারী ছিলেন।তিনি হিন্দু ধর্মীয় সমাজের জ্ঞান ভান্ডার প্লাবিত করেছিলেন।তিনি জগন্মোহন গোসাই শিষ্য শান্ত গোসাইর দ্বারা দীক্ষালাভ করেন।ভারতের নানাস্থান ঘুরে অবশেষে তিনি বিথঙ্গলে আখড়া স্হাপন করেন।শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গোসাই স্থানে স্থানে হিন্দু সমাজের লোকদের একত্রিত করে,তাদের মধ্যে ধর্মীয় জ্ঞান প্রদান করে তিনু স্মারনীয় হয়ে আছেন।তার মৃত্যুর অনেক পর তার স্মারনে বানিচং সদর থেকে ১৮ কি.মি পশ্চিমে বিথঙ্গল গ্রামে উপসনার জন্য একটি আখড়া প্রতিষ্ঠা করা হয়।ত্রিপুরার মহারাজা প্রতি বছর এই আখড়ায় আসতেন।এখনো হিন্দু,মুসলিম দর্শনার্থীরা প্রতিদিন আখড়ায় এসে রোগমুক্তির জন্য আখড়ার মোহন্তের থেকে পানি পড়া নিয়ে যান
শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
কলিযুগ
আক্ষরিকভাবে কলির যুগ বা পাপের যুগ হল হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী চার যুগের শ্রেষ্ঠ যুগ।অন্য যুগ গুলো হল, সত্যযুগ,ত্রেতাযুগ,দ্বাপরযুগ।মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্নিমা তিথিতে শুক্রবারে কলিযুগের উৎপত্তি।এর পরিমান ৪৩২০০ বছর।পূণ্য এক ভাগ পাপ তিন ভাগ।অবতার কল্কি।মানুষের আয়ু ১২০ বছর।নিজের হাতে সাড়ে তিন হাত,নিজের শরীরের আয়তন।প্রান অন্নে।তীর্থ গঙ্গা।সব পাত্র ব্যবহার করা হয়।ধর্ম সংকোচিত,মানুষ্ তপস্যাহীন।সত্য থেকে দূরে অবস্থানরত।শাসক ধনলোভী,ব্রাক্ষন শাস্রহীন।পুরুষ স্ত্রীর অনুগত,পাপে অনুরক্ত।সৎ মানুষের কষ্টবৃদ্বি,দুষ্টের প্রভাব বৃদ্ধি। তারক বৃক্ষ নাম,হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
সময় পরিমান
বেদব্যাস রচিত বিষ্ণু পুরানে বলা হয়েছে,কৃষ্ণের পৃথিবী ত্যাগ করে স্বর্গারোহন সময় থেকে পৃথিবীতে কলিযুগের সূচনা হয়েছে।
সোমবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৬
জীব গোস্বামীর জীবনী
জীব গোস্বামী (আনুমানিক ১৫১৪-১৫১৮) ছিলেল রূপ সনাতনের ভাতুষপুত্র,রামকেলিতে তার জন্ম।জীবের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন গৌড়ে অতিবাহিত হয়।পরে নিত্যনন্দের সঙ্গে স্বাক্ষাতের জন্য তিনি নবদ্বীপ যান,এবং তার আদেশে কাশীতে পন্ডীত মধুসূদন বাচস্পতির নিকট নানা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।এখানেই পিতৃব্য রূপ,সনাতনের সঙ্গে তার স্বাক্ষাত হয়,এবং রূপ গোস্বামী তাকে বৈষনব ধর্মে দীক্ষা দেন।তাদের সানিধ্যে জীব জ্ঞানসাধনায় আরো উৎকর্ষ লাভ করেন।তাদের তিরোধানের পর জীব গোস্বামী বৃন্দাবনে গৌড়ীয় বৈষনব সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেন।কৃষ্ণ মূর্তির বামে রাধা মূর্তি বসিয়ে যুগল রূপে পূজা প্রবর্তনে তিনি উৎসাহী ছিলেন।জীব বাল্যকাল থেকেই শ্রীচৈতন্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন।দীক্ষা গৃহনের পর তার সেই অনুরাগ আরো বৃদ্ধি পায়।চৈতন্য তথা বৈষনব ধর্ম তাকে মোহিত করে।তিনি বৈষনব ধর্ম ও তন্ত্র বিষয়ক নানা গৃন্থ রচনা করেন।তার রচিত ষটসন্দর্ভ একটি বিখ্যাত দার্শনিক গৃন্থ।এতে ছয়টি সন্দর্ভ বা অধ্যায় আছে এবং তাতে বিভিন্ন দার্শনিক তত্ব আলেচিত হয়েছে।জীব গোস্বামীর রচিত আরে কয়েকটি গৃন্থ হল:গোপাল চম্পু,হরিনামামৃত ব্যাকরন,ধাতুৃৃমূত্র মালিকা,মাধবমহোৎসব,সংকল্পদ্রম ও সারসংগৃহ,এছাড়াও তিনি উজ্জ্বলনীলামনি,ভক্তিসারমৃতসিন্ধু, গোপাল তাপনী ও ভাগবতের টীকা রচনা করেন।
বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬
গোপাল ভট্র জীবনী
গোপাল ভট্ট(আনুমানিক ১৫০০-১৫৮৫)দক্ষিন ভারতের অধিবাসী ছিলেন।মুরারী গুপ্তের কড়চা থেকে জানা যায় যে তার বাল্যকাল চৈতন্যদেবের দাক্ষিণাত্যের যাত্রার পথে তাদের গৃহে আথিত্য গৃহন করেন।তখন চৈতন্যদেবের প্রতি তার ভক্তি দেখে পিতা ত্রিমল ভট্র(মতান্তরে বেঙ্কক ভট্র) পুত্রকে পিতার চরনে সমর্পন করেন।চৈতন্যদেব তাকে আর্শীবাদ করেন এবং তারই আদেশে পিতামাতার সেবান্তে বৃন্দাবনে গিয়ে তিনি অন্যান্য গোস্বামীর স্বাক্ষাত লাভ করেন।চৈতন্যদেব নীলাচল থেকে তার জন্য নিজ কোপিন ও একটি কাচের আসন পাঠান।বৃন্দাবনে কাচের পিড়া নামক সেই আসনটি রাধার মন মন্দিরে এখনও পূজিত হয়।এই মন্দিরের পিছনেই গোপালের সমাধি রয়েছে।গোপাল সংস্কৃত ভাষায় ও দর্শনে সুপন্ডিত ছিলেন।তিনি কৃষ্ণ কথামৃত নাটকের শ্রীকৃষ্ণবল্লভা নামে একটি টীকার রচনা করেন।রূপ,সনাতনের মুখে তত্ব বিচার শুনে তিনি সূত্রাকারে ষটসন্দর্ভ গৃন্থের একটি কারিকা লেখেন।সংস্কৃত সাহিত্য পরিষৎ গৃন্থাগারে গোপাল ভট্রের লেখা দান খন্ড নামে একটি পুথি(নং ৪২৭) আছে।হরিভক্তি বিলাস নামে অপর একটি গৃন্থ গোপাল ভট্রের লেখা বলে কথিত আছে।যদিও কারো কারো মতেহ রিভক্তি সনাতনের রচনা,গোপাল পরে এর বিষয় বস্তুকে বিস্তৃত করেন।