নরত্তোম দাস ঠাকুর,তার লীলা জীবনে তিনি কোনদিন ভোগবিলাসে মত্ত হননি।রাজশাহী জেলার খেতুরী ধাম বৈষনবদের মিলন মেলা।ঠাকুর নরত্তোম দাস সমস্ত বৈষনবদের একত্র করে খেতুরী সম্মেলনের আয়োজন করেন।তার এই মেলা খেতুরী মহাৎসব নামে পরিচিত।তার স্মারনে প্রতি বছর কার্তিক মাসে এই মহামেলা অনুষ্ঠিত হয়।
অজানাকে জানা
মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬
রাজশাহী গোদাগাড়ি উপজেলার খেতুরীধাম
সনাতন গোস্বামীর জীবনী
সনাতন গোস্বামী ১৪৮০ সালে জন্মগৃহন করেন।শ্রীচেতন্যের অনুসারী বৈষনব কবি ও কাব্য রচয়িতা হিসাবে,যশোরের ৩ জন ব্যক্তিকে বিশেষ ভাবে চিহ্নিত করা হয়।তারা হলেন।১.সনাতন গোস্বামী।২.রূপ গোস্বামী ও। ৩.জীব গোস্বামী।সনাতন গোস্বামী এবং রূপ গোস্বামী ছিলেন সহোদর।জীীব গোস্বামী ছিলেন তাদের ভাইপো।এই পরিবারটি স্বাধীন সুলতানী আমলের এক ছোট সামান্ত সমাজের অংশ বিশেষ।এদের পূর্ব পুরুষেরা বর্তমান পশ্চিম বঙ্গের নৈহাটিতে বসবাস করতেন।এই পরিবারের এক সদস্য পারিবারিক কলহের কারনে নৈহাটি থেকে ফতেয়াবাদে চলে আসেন।ফতেয়াবাদ স্বাধীন সুলতানী আমলে ছিল একটি সরকার।ফতেয়াবাদ এক সময় সন্দীপ থেকে শুরু করে বর্তমানে,ফরিদপুর,বরিশাল,খুলনা ও যশোরের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত ছিল।স্হানীয় প্রবাদ ও প্রমানাদি থেকে জানা যায়,নৈহাটি থেকে চলে আসা কুমারের পরিবারটি বর্তমান যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার প্রেমভাগে বসতি স্হাপন করেন।এই প্রেমভাগে সনাতন গোস্বামী ১৪৮০ সালে জন্ম গৃহন করেন।এই পরিবারে কর্তিত ৭টি দিঘি আজও প্রেনভাগে বিদ্যমান।সনাতন গোস্বামীরর পিতার দেওয়া নাম ছিল অমর।শ্রীচৈতন্যদেব অমরের নাম রাখেন সনাতন।স্হানীয় সংস্কৃত টোলে সনাতন গোস্বামী প্রাথমিক লেখাপড়া শেষ করেন।এক সময় তিনি বাংলার সুলতান হুসেন শাহের সরকারের চাকরি গৃহন করেন।তার পদের নাম ছিল শাকের মল্লিক।কথিত আছে সনাতন গোস্বামী এক সময় এক গরীব ব্রামনের বসতবাড়ি দখল করেন।এই লোকটি তার বসতবাড়ি দখলের বিষয়টি তার ছোট ভাই রূপ গোস্বামীকে জানান।রূপ তার সহোদরকে একটি সাংকেতিক চিহ্নের মাধ্যমে সাবধান করেন।এর পর সনাতন গোস্বামীী মনের মধ্যে বিপুল পরিবর্তন দেখা দেয়।তিনি বিষয় বৈভব ত্যাগ করে বৃন্দাবনে গমন করেন এবং বৈষনব ধর্ম প্রচারে মনোনিবেশ করেন।এরপর শ্রীচৈতন্যদেবের সানিধ্য লাভ করেন।তিনি ১৫৫৮ সালে দেহ ত্যাগ করেন।
ষড় গোস্বামীর বিস্তার
ষড় গোস্বামী সনাতন ধর্মের এক দল মহান সাধকদের নাম।এই ছয় জন গোস্বামী,সবাই মহাপ্রভুর সানিধ্য লাভ করেছিলেন।যাদের জন্ম না হলে সনাতন ধর্মে কোনদিন, বৈষনবদের উৎপত্তি বিস্তার লাভ করতো না।তারাই সনাতন ধর্মের ছয় গোস্বামী নামে পরিচিত।একে একে এই ছয়জন গোস্বামীর পরিচয় তুলে ধরা হবে।
নরত্তোম দাস ঠাকুরের জীবন আলোচনা
একদিন মহাপ্রভু রাজশাহী জেলার পদ্মার তীরবর্তী গোপালপুর গ্রামে আগমন করেন,সেখানে এসে মহাপ্রভু নরত্তোম-নরত্তোম বলে কেঁদে উঠলেন।এরপর বহুবছর পর পদ্মার নদীর নিকটে গোপালপুর নগরে রাজা কৃষ্ণনন্দের ঔরশে ও নারায়নী দেবীর গর্ভে ১৫৩১খ্রিস্টাব্দে মাঘ মাসের শুক্ল পনজ্মীতে শ্রী নরত্তোম দাস ঠাকুর জন্ম গৃহন করেন।তার পিতার অগাধ সম্পত্তি ছিল,কিন্তু কোনদিন ভোগবিলাস তার জীবনে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলতে পারেনি।বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার ভিতরে জন্ম নেয় অগাধ ভক্তি।এই মহান সাধক,এই সুন্দর রাজ ভোগের কথা চিন্তা না করে,বিলসসিতার প্রতি মর্ত্য না হয়ে ভগবানের প্রেমে সবসময় নিজেকে আত্মউৎসর্গ করেন।তার বাবা সবসময় চাইতেন তার একমাত্র সন্তান সারাজীবন তার রাজ্যভার দেখাশুনা করবেন।কিন্তু সেদিকে তার কোন মন ছিল না।সবসময় তিনি ভক্তি এবং মুক্তির কথা ভাবতেন।একবার তার পিতা রাজকার্য পরিচালনার সুবিধে অন্য জায়গায় গমন করেন,সেই সুযোগে নরত্তোম দাস ঠাকুর তার পিতার অনুপস্থিতে গভীর রাতে কৌশলে মায়ের কাছ বিদায় নিয়ে রাজভোগ ত্যাগ করে তিনি দীক্ষালাভের জন্য বৃন্দাবন গমন করেন।সেখানে লোকনাথ গোস্বামীর ভজন কুটিরে শ্রী জীব গোস্বামী ও শ্রীনিবাস আচার্য গোস্বামীর সঙ্গে নরত্তোম দাস ঠাকুরের সাক্ষাত হয়। লোকনাথ গোস্বামী থেকে তিনি রাধাকৃন্ষ মন্ত্রে দীক্ষা লাভের পর তিনি গুরু সেবার কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন,এবং শ্রীজীব গোস্বামীর থেকে গৃন্থশাস্ত্র অধ্যয়ন করে বৈষনব দরর্শনের উপর বিশাল জ্ঞান লাভ করেন।শ্রীজীব গোস্বামী তার জ্ঞানে ও গুনে মুগ্ধ হয়ে তাকে ঠাকুর মহাশয় উপাধিতে ভূষিত করেন। একবার ঠাকুর নরত্তোম দাস শ্রীনিবাস আশ্চর্যের সঙ্গে হিন্দুধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে গৌড়দেশে গমন করেন,পথিমধ্যে ধর্মীয় গৃন্থগুলো চুরি হয়ে যায়।শ্রীনিবাসের আদেশ অনুসারে তিনি সন্যাস বেশে গোদাগারি খেতুরি ধামে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।সেখানে ফিরে আসার পর নানা অকল্পনীয় কাজের সমাধানের জন্ তার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে,ঠাকুর নরত্তোম তার নিজ এলাকায় মন্দির স্হাপন করেন।সেখানে তিনি গভীর রাত পর্যন্ত গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন।দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা তার কাছে আসতেন শিষ্যত্ব গৃহন করার জন্য,তিনি জাতে কায়স্থের ছেলে ছিলেন লোকে তাকে অবন্জ্ঞা করতেন।কিন্তু পরবর্তীতে তার আধ্যাত্মিক গুনের কারনে হাজার হাজার লোক তার শিষ্যত্ব গৃহন করেন। তার দুই প্রিয় শিষ্য গঙ্গানারায়ন গোস্বামী ও রামকৃষ্ণ গোস্বামী,তাকে মার্জনা করার জন্য নদীর ঘাটে নামেন,সেখানে ঠাকুর নরত্তোমকে সারা শরীর দুধ লেপন করেন।দুধ লেপন করতে করতে তিনি নদীর জলে বিলীন হয়ে যান।১৬১১ খ্রিস্টাব্দে কার্তিক মাসের কৃষ্ণ পন্ঝমী তিথিতে এই সত্যের মহান সাধক ইহলীলা সংবরন করেন।