অজানাকে জানা

বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬

হিন্দুর্মে কি কারনে কোন বিবাহ অবৈধ বলে বিবেচিত হয়?

প্রথমতঃ হিন্দুবিবাহ চুক্তি নয়,ব্রত।এ আঙ্গিকে দলিল করে বিবাহ শাস্ত্রবিহিত নয়।
দ্বিতীয়তয়ঃ সাবালিকা না হলে কন্যা পাত্রের হাতে তুলে দিলে,তাহা শাস্ত্রবিরুদ্ব আচরন বলে বিবেচিত হবে।
তৃতীয়তঃ কন্যা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ প্রদান করিলে তাহা শাস্ত্রবিরুদ্ধ আচরন বলে বিবেচিত হবে।
চতুর্থতঃ সৎ পাত্র দেখে কন্যাকে অবশ্যই দান করতে হবে, তানাহলে তাহা শাস্ত্রবিরুদ্ধ আচরন বলে বিবেচিত হবে।

সদগুরুর সাধন বলতে কি বুঝায়।

সনাতন ধর্মে সাধনার পথ অনেক রকমের।রামকৃষ্ণের ভাষায় যত মত তত পথ। তাই কোন মত অবলম্বন করলে,তাহা  হতে মুক্তি লাভ করার অবশ্যই পথ থাকবে, তবে তাহা নিজের খুঁজে নিতে হবে।সাধনায় সিদ্ধি লাভ করলেই যে তিনি সদগুরু  হবেন তাহাও নয়।কেউ কেউ সদগুরুর আসন অলংকৃত করেন,কেউ কেউ তাহা করেন না।যেমন চৈতন্যমহাপ্রভু,লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারী,শ্রীরামকৃষ্ণ এরা সিদ্ধ মহাপুরুষ কিন্তু, কাউকে দীক্ষা দেননি। চৈতন্য মহাপ্রভুকে আমরা সবাই ঈশ্বর বলে মানি,তবুও তিনি দেহ ধারন করে মানুষের মাঝেই ছিলেন। সাধনপ্রনালী ঠিক ঠিক বলে দেওয়া সম্ভব নয়।তাহা গুরু নির্দেশিত

সাধনা কত প্রকার?

হিন্দু ধর্মে সাধনার কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই।তবে কোন পথে সাধনা করলে অতি তাড়াতাড়ি ভগবানের চরন দর্শন পাওয়া যাবে তাহা,একমাত্র দীক্ষা গুরু বলতে পারেন।তাহার আদেশ মত উপাসনা করলে ভগবানের চরন দর্শন পাওয়া যাবে অতি সহজে।তবে গীতার বানী, অনুসারে সবাই শাস্ত্র অনুসরন করে আরাধনার কথা বলা হয়েছে।শাস্ত্র অনুসরন না করে, একমাত্র ভক্তি দ্বারাই তাহার চরন পাওয়া সম্ভব।

গুরু বড় নাকি দেবতা?

দেবদেবী সকল সম্পদ যোগান দেওয়ার মালিক।তারা একেক জন একেক শক্তির অধিকারী,সম্পদের পাহাড় তারা।একটি উদাহরন দিয়ে বলা যাক,কোন রাষ্টের প্রধানমন্ত্রী সকল ক্ষমতার উৎস।তাহার অধীনে অনেক মন্ত্রী বিদ্যমান।তারা একেক জন একেক ক্ষমতার অধিকারী। মন্ত্রী কোন অর্থের যোগান দিলে প্রধানমন্ত্রীর শরনাপন্ন হন,তিনি দিলে মন্ত্রী তাহা দিতে সক্ষম,তানাহলে মন্ত্রী অক্ষম।তাহলে বুঝা গেল দেবদেবীর হাতে কোন পাওয়ার নেই সব জগত গুরু অথবা মানুষ নামক গুরুর হাতে।

শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

তুলসীদেবীকে শিব ও গনেশের অভিশাপ

তুলসীপত্র শিবলিঙ্গে প্রদানের ব্যাপারে কড়া বিিধনিষেধ জারি করে হিন্দু পরম্পরা।পুরান অনুসারে তুলসীদেবী ছিলেন মহাপরাক্রমশালী অসুর জলান্ধের(শঙ্খাচূড়)স্ত্রী। দেববরে অজেয় হয়ে জলান্ধর বিরাট প্রতিপত্তি লাভ করেন।এমতাব্স্থায় শিব, বিষ্ণু ছলনায় আশ্রয় নিয়ে জলান্ধরকে হত্যা করেন।ক্ষুব্ধ তুলসীকে সন্তুষ্ট করতে বিষ্ণু তাকে বর দেন।তিনি বিষ্ণু পদে স্হায়ী আসন লাভ করেন।কিন্তু,শিবকে ক্ষমা করেননি তুলসী,তিনি শিবকে অভিশাপ দেন।সেই থেকে শিব পূজায় তুলসী দেওয়া নিষিদ্ধ হয়।আরেকটি মতবাদ,পুরানের কথা অনুসারে,একদিন তরুন গনপতি গনেশকে তুলসী ধ্যানস্থ দেখে,তার প্রতি মুগ্ধ হয়ে,তার প্রেমে পড়েন তুলসী দেবী।কিন্তু গনেশ জানান তিনি কঠিন প্রতিজ্ঞা বদ্ধ,তিনি ব্রক্ষ্মচারী।প্রেম বা বিবাহ তার পক্ষে অসম্ভব।তিনি গনেশকে অভিশাপ দেন ব্রক্ষচর্য পালন করা তার পক্ষে স্হায়ী হবেনা।গনেশও তাকে অভিশাপ দেন যে,তিনি পশুর স্ত্রী রূপে পরিনত হবেন।পরে তুলসী গনেশের কাছে ক্ষমা চাইলে,গনেশ তাকে জানান,তুলসী দেবত্বপ্রাপ্ত হবেন।কিন্তু,তার পূজায় তুলসী ব্যবহৃত হবেনা।গৃহের অভ্যন্তরে তুলসীবৃক্ষ স্হাপন নিষিদ্ধ হয়।আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে তুলসী দেবীর স্বামীর মৃত্যুর পর বিষ্ণু,তুলসীকে বর দান করেন।বর অনুসারে তুলসী বিষ্ণুকে জানান তাকে গৃহে নিয়ে যাওয়ার জন্য,কিন্তু,বিষ্ণু জানান তার গৃহে লক্ষ্মী রয়েছে সেখানে তুলসী থাকতে পারেনা।ফলে তুলসীর স্হান গৃহে না হয়ে হয় গৃহাঙ্গনে।

শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

তুলসীদেবীর জম্মবৃত্তান্ত

যস্যা দেবাস্ত্ত লীনাস্ত্ত বিশ্বেষু অখিলেষুচ,তুলসীতেন বিখ্যাত।
সরলার্থ:এ অখিল জগতে যে দেবীর তুলনা নেই,তিনিই তুলসী নামে বিখ্যাত হয়েছেন।
তুলসীনামে গোলকে শ্রীকৃষ্ণপ্রিয়া শ্রীরাধিকার এক সহচরী ছিলেন।শ্রীরাধিকা তাকে মানবযোনি লাভের অভিশাপ দেন।,তখন তুলসী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরনাপন্ন হন।শ্রীকৃষ্ণ তুলসীকে বললেন যে,তুলসী মানবযোনিতে জন্মগৃহন করলে,তপস্যাবলে নারায়নের অংশ লাভ করবেন।অভিশাপ অনুসারে তুলসী জগতে ধর্মরাজ নামে রাজার এবং তার স্ত্রী মাধবীদেবীর কন্যারূপে জন্মগৃহন করেন।তুলসী অতুলনীয় রূপ লাবন্যের অধিকারী হন।পরে তুলসী বনে গিয়ে ব্রক্ষ্মার তপস্যা নিমগ্ন হন,ব্রক্ষ্মাদেব তার সাধনায় মুগ্ধ হয়ে তাকে বর চাইতে বলেন।তুলসী নারায়নকে পত্নীরূপে পাওয়ার ইচ্ছা পোষন করেন।ব্রক্ষ্মা বললেন যে,তুলসী দানবরূপী শঙ্খচূড়কে বিবাহ করলে নারায়ন প্রাপ্তি ম্ভব হবে।নারায়নের আর্শিবাদে তুলসীবৃক্ষ রূপে জন্ম নিবে,বিশ্বপাবকে পূজা পাবে।তুলসী ব্যতিত নারায়ন পূজা বিফল হবে।
তুলসী কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে ধরাধামে জন্মগৃহন করেন।

মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শ্যাম বাউল গোস্বামী

শ্রী শ্রী শ্যাম বাউল গোস্বামী(সপ্তদশ শতাব্দী) ছিলেন ইষ্ট সাধনায়  সিদ্বি লাভে সমর্থ,অলোকিক শক্তি লাভের অধিকারী,যুগসিদ্ধ এক মহাপুরুষ।শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ গেসাইর নিকট তিনি দীক্ষা লাভ করেন,এবং বৈষনব ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি বানিয়াচং আসেন।অনেক বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে অবশেষে তিনি যাত্রাপাশা মহল্লায় আখড়া স্হাপন করেন।তিনি অসহায় জীবের পরিত্রানকারী হিসেবে,মানুষের অন্তরে স্হান করে নিয়েছিলেন।শ্যাম বাউলের বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ও ভারতে অনেক ভক্ত ও শিষ্য রয়েছে।প্রতি বছর আখড়ার সন্নিকটে তার স্মারনে চৈত্রমাসের অষ্টমীর মেলা অনুষ্ঠিত হয়।তার জন্ম ও মৃত্যু সম্পর্কে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।শ্যাম বাউলের আখড়া শ্যামবাউল নামে এক সাধক কর্তৃক এই আখড়া প্রতিষ্ঠিত হয়।বানিয়াচঙ্গের সর্বদক্ষিনে যাত্রাপাশার দক্ষিন প্রান্তে এ আখড়াটি অবস্থিত।শ্যাম বাউল জগন্মোহনীবাউল বৈষনব ধর্মানুসারী ছিলেন।লাখাই উপজেলার বাঘাসুরা নিবাসী,জগম্মোহন গোসাই প্রায় তিনশত বছর পূর্বে এ  ধর্মমতের প্রবর্তন করেন।এ ধর্মমতে গুরুকে প্রত্যক্ষ ভগবান জ্ঞানক্রমে গুরুকে উপাস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।এরা কোন মূর্তিপূজা করেনা তত্বগতদিকে পুরুষদের ব্রক্ষ্মচর্য অবশ্যই পালনীয়।স্হানীয়ভাবে এ সম্প্রদায়ের লোকদের বৈরাগী বলে আখ্যায়িত করা হয়।কৈর্বত সমাজে এ ধর্মমতের প্রচলন সর্বাধিক।বারুনী উপলক্ষে হিন্দু,মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বহুলোক সমাগম হয়।অনেকের বিশ্বাস শ্যাম বাউলের আখড়ায় বারুনী উপলক্ষে অপরাহ্নে অনেক ঝড়,তুফান হয়ে থাকে।

বিঃদ্রঃ বিস্তারিত আখড়া দর্শনে